বুধবার । ৫ই নভেম্বর, ২০২৫ । ২০শে কার্তিক, ১৪৩২

নিহত মাদ্রাসা শিক্ষকের পরিবারের আহাজারি থামছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

সন্ত্রাসী হামলায় নিহত মাদ্রাসা শিক্ষক ইমদাদুল হকের পরিবারের আহাজারি যেন কিছুতেই থামছে না। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সোমবার দুপুরে নিহতের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন এবং এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়েন। গতকাল সোমবার বাদ আছর কুয়েট সড়কে অবস্থিত খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে যশোরের মনিরামপুরে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।

নিহতের ছেলে সাদমান শাকিব ওমি নিহত বাবার মুখ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তিনি বলতে থাকেন “বাবা দুপুর হয়েছে, তুমি খেয়েছ? আমার বাবা আর কখনও খাবে না!” এর আগে সকালে ওমি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার বাবা আমাকে কখনও এক গ্লাস পানি ঢেলে খেতে দেয়নি। আমাকে খুব আদর করত। আমাকে এখন আর কে আদর করবে? বাবা আমার সাফল্য দেখে যেতে পারলেন না। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচার চাই।”

নিহত ইমদাদুল ইসলামের ছোট স্যালক সুমন বলেন, “আমার দুলাভাই খুবই নিরীহ প্রকৃতির একজন মানুষ ছিলেন। কোনো রাজনীতির সাথে কখনও সম্পৃক্ত ছিলেন না। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। ফুলবাড়িগেট ইউসেপ টেকনিক্যাল স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। অবসর গ্রহণের পর আড়ংঘাটা থানাধীন বুচিতলা নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। ওনার এক ছেলে এক মেয়ে। বড় মেয়ে জেরিন আঞ্জুন ইমা দুই বছর আগে খুলনা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছে। বর্তমানে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছে। ছেলে সাদমান সাকিব ওমি চলতি বছর মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার্থী। স্ত্রী উদয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ঘটনার সময় উনি কুয়েট সড়কে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও যোগীপোল ইউপি সদস্য মামুন শেখের অফিসে মাদ্রাসার মাহফিলের সহযোগিতার জন্য গিয়েছিলেন। এ সময় সন্ত্রাসী হামলায় তিনি নিহত হন।”

এদিকে সন্ত্রাসী হামলায় মাদ্রাসা শিক্ষক নিহত, বিএনপি’র তিন নেতা-কর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসীর উদ্যোগে মশাল মিছিল ও সড়ক অবরোধ অনুষ্ঠিত হয়।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মশার মিছিলটি ফুলবাড়িগেট এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে খুলনা-যশোর মহাসড়কের কুয়েট প্রবেশদ্বারে অবস্থান নেয়। এ সময় মিছিলকারীরা সড়ক অবরোধ করে সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয়। মিছিল কারিরা প্রায় ৪০ মিনিট সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় সড়কের দু’পাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। মশাল মিছিল শেষে আগামী ৫ নভেম্বর বিকেল ৪টায় কুয়েট সড়কের খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সড়ক অবরোধকালে বক্তৃতা করেন খানজাহান আলী থানা বিএনপি’র সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান, মো. আল-আমিন হাওলাদার, মো. রাসেল মাহমুদ, মো. রবিউল ইসলাম, মো. হান্নান আলী, আবু হোসেন, রিফাত হোসেন, তানভীর ইসলাম, ঋতু, মো. জাহিদ শেখ, মো. সবুজ হাওলাদার, নাসিম শেখ, মো. হৃদয়, মো. রোহান, হাবিব শেখ প্রমুখ।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন